পোস্টগুলি

আমার আন্দালুস

ছবি
  আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগের কথা। স্পেন তখন ছিল আন্দালুস। মুসলিম স্পেন। চারিদিকে জ্ঞান বিজ্ঞানের জয়জয়কার। বড় বড় জ্ঞানী বিজ্ঞানী লেখক কবি ইতিহাসবেত্তা আলেম উলামার ছড়াছড়ি চারিদিকে। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার বড় বড় দালান প্রাসাদ, উন্নত সড়ক, বিশাল কারখানা, কারুকার্যখচিত মাসজিদ সব মিলিয়ে সে যেন এক স্বর্গরাজ্য। আজকের যেমন লন্ডন প্যারিস, সেই সময়কার লন্ডন প্যারিস ছিল আন্দালুসের কর্ডোভা, গ্রানাডা, আল-হামরা, সেভিল আরো কত সমৃদ্ধ সব ঝলমলে নগরী। এটা শুধু স্পেনের কথা বলছি, মুসলমানদের অন্য ান্য সব সমৃদ্ধ নগরী বাগদাদ, দামেস্ক, কুফা, রাকা সেগুলোর কথা নাহয় আরেকদিন বলবো। আন্দালুসের নগরীগুলো এতো সমৃদ্ধ ছিল, ইসলাম এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের এক অপূর্ব সমন্বয় ছিল। একটুও বাড়িয়ে বলছি না। ইতিহাসবেত্তা আল্লামা মুকরি তার বিশাল বড় এক গ্রন্থ নাফহুত তীব-এর একটা পুরো ভলিউম শুধু লিখেছেন কর্ডোভা নগরী নিয়ে, কর্ডোভার সৌন্দর্য নিয়ে। সবচেয়ে মজার বিষয় যেটা বলবো সেটা হচ্ছে তখনকার সময়ে বই ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্রন্থাগার গড়ে তোলার সংস্কৃতি ছিল। যাদের বইয়ের দিকে ঝোঁক ছিল না সমাজে তাদে...

উসমানীয় পলিমেথ

ছবি
উসমানীয় সাম্রাজ্যে প্রথম ছাপখানার জনক ইব্রাহিম মুতেফেররিকা (১৬৭৪-১৭৪৫) যিনি ছিলেন একজন পলিমেথ। পলিমেথ মানে হচ্ছে বহুবিদ্যাবিশারদ। মধ্যযুগের ইসলামী স্বর্ণালী যুগে বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই ছিলেন পলিমেথ। প্রায় সব বিজ্ঞানী, ইবনে সিনা, ওমর খৈয়াম, আল-বাত্তানি, আল-বিরুনি, আল-রাযী, ইবনে হাইসাম এরকম অনেকের নাম বলা যায়। পলিমেথের সংস্কৃতি মূলত মুসলিম বিজ্ঞানীদের দ্বারাই সূচীত হয়, এরপর তা ইউরোপে যায়। তবে আধুনিক যুগে পলিমেথ হচ্ছে হ্যালির ধূমকেতুর মতই বিরল, ৭৬ বছরের মধ্যে দেখা গেলেও যেতে পারে ক দাচিৎ। তাও সম্ভাবনা কম। কিন্তু ইসলামী স্বর্ণযুগের জ্ঞানী বিজ্ঞানী যত জনকে জানি প্রায় সকলেই ছিলেন পলিমেথ। এখনের যুগে পলিমেথ হওয়া অসম্ভবের কাছাকাছি কারণ জ্ঞান বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখা এতো বেড়ে গিয়েছে আর প্রতিটি শাখা এতো বিস্তৃতি লাভ করেছে যে এক সাবজেক্ট নিয়েই সারাজীবন কেটে যায়। আমার বড্ড ইচ্ছে ছিল পলিমেথ হবো। কিন্তু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যারিস্টার (আবার ডাক্তারি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভেতর হাজারটা শাখা প্রশাখা) একত্রে হওয়া সম্ভব কি? এই যুগে! নন-অ্যাকাডেমিকগুলোর কথা বাদ-ই দিলাম। হুম সম্ভব, যদি কেউ হাজার ব...

যে নারী সাহাবী যোদ্ধা ছিলেন

  অনেক নারী সাহাবীই যোদ্ধা ছিলেন, তবে উম্মে আমারা (রাঃ) ইতিহাসে একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। তাঁর প্রকৃত নাম নুসাইবাহ বিনতে কা'ব আল আনসারিয়াহ (রাঃ)। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার, তিনি যখন উহুদ যুদ্ধে অংশ নেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৩ বছর, উহুদ যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন, ১৩ টি স্থানে আঘাত লেগেছিল। আবার তিনি যখন ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৫২ বছর। একজন মহিলা হয়েও তিনি সেই বয়সে যুদ্ধে অংশ নেন। উম্মে আমারা (রাঃ) এর ছেলে ছিলেন বিখ্যাত বীর সাহাবী হাবিব (রাঃ)। ভণ্ডনবী মুসায়লামা কাযযাব উম্মে আমারার ছেলে হাবিব (রাঃ)কে বন্দী করে একটি একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে কষ্ট দিয়ে হত্যা করে (মুসায়লামাকে নবী বলে স্বীকার করেন নি বলে)। মুসলিম বাহিনী যখন ভণ্ডনবী মুসায়লামার বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দেয় তখন উম্মে আমারা পণ করেছিলেন ভণ্ডনবী মুসায়লামা কাযযাবকে যুদ্ধের ময়দানে নিজ হাতে মারবেন। ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি এক হাতে বর্শা ও অন্য হতে তারবারি চালাতে চালাতে শত্রু বাহিনীর ব্যূহ ভেদ করে সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। এতে তাঁর দেহের এগারটি স্থান নিযা ও তরবারির আঘাতে আ...

যুদ্ধ ও ক্ষমতার সমীকরণঃ কে বেশি শক্তিশালী

ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে পৃথিবীর তিনজন প্রতাপশালী রাজা/ বাদশাহ ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান প্রথম সলিম, সাফাভী ইরানের শাহ ইসমাঈল আর তৈমুরীয় বংশের তরুণ যোদ্ধা বাবর (তখনো মোঘল সাম্রাজ্যের জন্ম হয়নি।) সুলতান সলিম আর শাহ ইসমাঈল দুটো বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, তাদের প্রতাপশালী বলা ঠিক আছে কিন্তু বাবর তখন কিছুই ছিলেন না, একজন উথান পতনের মধ্যে দিয়ে সারভাইভ করে বাঁচা এক তরুণ বাদশাহ ছিলেন, অবশ্য পরবর্তীকালে সে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন। তাদের তিনজনের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করবো। আলোচনায় অবশ্য সুলতান সুলেইমান, শাহ তাহমাস্প আর সায়বানি খানের আলোচনাও এসে যাবে। তিনজনের মৃত্যুর সময়কাল বলি, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে, সুলতান সলিম মারা যান ১৫২০ সালে, শাহ ইসমাঈল মারা যান ১৫২৪ সালে আর বাবর ১৫৩০ সালে। এর মানে ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকটায় তারা পৃথিবীতে বেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এবার দেখা যাক কে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। বাবর যখন একেবারে কিশোর, হঠাৎ পিতার মৃত্যুতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই ফরগানার রাজতখতে বসেন। সেই কিশোর বয়স থেকে আজীবন বাবর যুদ্ধ করে করে এমন এক সাম্রাজ্য গড়েছিলেন যার ন...

কবিতা সংগ্রাম-৩

আমরা সেই জাতি, সংগ্রাম করে বাঁচি, সত্যের পথে থাকি, এ পথে লড়ি, জীবন বিলিয়ে দেই, তাজা খুন বইয়ে তবু মোরা এ ঈমান বেচি না। যে পথে হেঁটেছে সব নবী ও রসূল, মুমিনেরা সে পথে মরতে আকুল, সাহাবী, শুহাদাদের পদরেখা দেখো, এখনো জ্বলজ্বল যেন করছে দেখো। সংগ্রামী পথে হাঁটে মুমিনেরা ভয়হীন, যে পথে গেছে সব সালফে সালেহীন। চারিদিকে শোনা যায় আমাদের তাকবীর, প্রভু ছাড়া কারো কাছে নোয়াই না এ শির। আমাদের পতাকায় লেখা দেখো কালেমা, গর্বিত আমরা, রাসূলের উম্মাত, আমরা চলি সেই কুরআনের পথে, আমাদের এ পথ চলেছে জান্নাত।

বই রিভিউঃ নসীম হিজাযীর শেষ প্রান্তর

ছবি
শেষ প্রান্তর, আমার পড়া সেরা ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোর একটি। নসিম হিজাযী গুণী সাহিত্যিক, এই বইটি দিয়েই তাকে চেনা, এরপর একে একে নসীম হিজাযীর অনুবাদ হওয়া সবগুলো উপন্যাস পড়ে ফেললাম। আর কত বার করে যে “শেষ প্রান্তর” পড়লাম, ইয়ত্তা নাই। তবু যেন স্বাদ মিটে না। মনে হয় আমিও সেখানের একজন, মঙ্গোলদের আক্রমণ প্রতিরোধের এক অপরাজিত সৈনিক। বলে রাখা ভালো ঐতিহাসিক উপন্যাস আর ইতিহাসকে এক করে ফেললে সমস্যা। ইতিহাস জানতে ইতিহাসের বই পড়তে হবে, ঐতিহাসিক উপন্যাস হোলো ঐতিহাসিক সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি সাজানো গল্প, সেখানে অনেক চরিত্রই কাল্পনিক হয়। তাই ঐতিহাসিক উপন্যাসকে ধ্রুব ইতিহাস বলে ভাবা যাবে না। এবার বইয়ের গল্পে আসি। বর্বর মঙ্গোলদের খাওয়ারেজমীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে উপন্যাসটি রচিত। নসীম হিজাযী বড় দরদী ভাষায় তা ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের অতীতের সমৃদ্ধ ইতিহাস পড়তে পড়তে মনে সূক্ষ্ম বেদনার সঞ্চার হবে। মঙ্গোলদের অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের মুখে অধিকাংশই বাঁচতে পারেন নি। সাধারণ মানুষ, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ নির্বিশেষে হত্যা করা হয়েছে, তাদের কাঁটা মাথা সাজিয়ে উচু করা হতো, যে কমান...

প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সামরিক পাইলট

ছবি
উসমানীয় পাইলট আহমেদ আলী এফেন্দি, পৃথিবীর প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সামরিক পাইলট। উপরের ছবিটা ১৯১৬ সালের। আহমেদ আলীর জন্ম ১৮৮৩ সালে ইজমিরে। তার দাদি বুরনু (বর্তমান নাইজেরিয়া) থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্যে দাস হিসেবে এসেছিলেন। নাবিক হওয়ার লক্ষ্যে ১৯০৪ সালে তিনি হাদিহান মেক্তেবি নামক নৌ কারিগরি বিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯০৮ সালে তিনি ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হন। এরপর নেভাল ফ্লাইট স্কুলে (দেনিজ তায়ারে মেক্তেবি) উড্ডয়ন কোর্সে যোগ দেন। এরপর তিনি উসমানীয় বিমান বাহিনীর একজন সদস্য হন। আহমেদ আলি উড্ডয়ন ইতিহাসের প্রথম সামরিক পাইলট। ১৯১৬ সালের নভেম্বরে তিনি পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন আহমেদ আলিকে উড্ডয়ন কোর্স সম্পূর্ণ করার জন্য বার্লিন পাঠানো হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় খিলাফাতের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।