যে নারী সাহাবী যোদ্ধা ছিলেন
অনেক নারী সাহাবীই যোদ্ধা ছিলেন, তবে উম্মে আমারা (রাঃ) ইতিহাসে একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
তাঁর প্রকৃত নাম নুসাইবাহ বিনতে কা'ব আল আনসারিয়াহ (রাঃ)।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার, তিনি যখন উহুদ যুদ্ধে অংশ নেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৩ বছর, উহুদ যুদ্ধে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন, ১৩ টি স্থানে আঘাত লেগেছিল। আবার তিনি যখন ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৫২ বছর। একজন মহিলা হয়েও তিনি সেই বয়সে যুদ্ধে অংশ নেন।
উম্মে আমারা (রাঃ) এর ছেলে ছিলেন বিখ্যাত বীর সাহাবী হাবিব (রাঃ)। ভণ্ডনবী মুসায়লামা কাযযাব উম্মে আমারার ছেলে হাবিব (রাঃ)কে বন্দী করে একটি একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে কষ্ট দিয়ে হত্যা করে (মুসায়লামাকে নবী বলে স্বীকার করেন নি বলে)। মুসলিম বাহিনী যখন ভণ্ডনবী মুসায়লামার বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দেয় তখন উম্মে আমারা পণ করেছিলেন ভণ্ডনবী মুসায়লামা কাযযাবকে যুদ্ধের ময়দানে নিজ হাতে মারবেন।
ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি এক হাতে বর্শা ও অন্য হতে তারবারি চালাতে চালাতে শত্রু বাহিনীর ব্যূহ ভেদ করে সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। এতে তাঁর দেহের এগারটি স্থান নিযা ও তরবারির আঘাতে আহত হয়। শুধু তাই নয়, একটি হাত বাহু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতেও তিনি সিদ্ধান্ত থেকে টলেননি। এভাবে মুসায়লামা কাযযাবের সামনে পৌঁছে যান কিন্তু তিনি আঘাত করার আগেই মুসায়লামাকে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ হত্যা করে ফেলেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমিই কি তাকে হত্যা করেছো? আবদুল্লাহ জবাব দিলেন, একটি কোপ আমার অন্যটি ওয়াহশীর। আমি বুঝতে পারছিনা কার কোপে সে নিহত হয়েছে।
উম্মু আমারা (রাঃ) দারুণ উত্ফুল্ল হলেন এবং তখনই সিজদায়ে শুকর আদায় করলেন।
উম্মে আমারা (রাঃ)এর জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে ইসলামের ইতিহাস। ইসলামের প্রথম যুগেই মুসলিম হয়েছিলেন । তিনি তার স্বামীর সাথে আকাবার বায়াতে অংশ নেন । ইতিহাসে উল্লেখ আছে ৭৩ জন পুরুষ এবং ২ জন মহিলা এই বায়াতে অংশ নেন । উম্মে আমারা (রাঃ) সেই দলে ছিলেন।
তিনিই প্রথম নারী যিনি ইসলামের জন্য যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করেছেন। প্রথমদিকে যুদ্ধরত সাহাবীদের সেবা-শুশ্রূষা করলেও উহুদের যুদ্ধে যখন পরিস্থিতি পরাজয়ের দিকে চলে যাচ্ছিল, এবং মহানবী (সাঃ)-এর চারপাশে কেউ ছিল না, তখন এই নুসাইবা (রাঃ)ই রাসূল (সাঃ)-কে ঘিরে ধরেন এবং বিপরীত পক্ষের তীরের আঘাত হতে নবীজিকে রক্ষা করেন।
এছাড়াও তিনি হুনায়নের যুদ্ধ, ইয়ামামার যুদ্ধ, বায়আতে রিদওয়ান, খায়বার, মক্কা বিজয় এবং হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় উপস্থিত ছিলেন।
খলীফা উমার (রাঃ) এর খেলাফত কালে একবার গনীমতের মালের মধ্যে কিছু চাদর আসে। তার মধ্যে একটি চাদর ছিল খুবই সুন্দর ও দামী। অনেকে বললেন, এটি খলীফা তনয় আবদুল্লাহর (রা) স্ত্রীকে দেওয়া হোক। অনেকে খলীফার স্ত্রী কুলছুম বিনত আলীকে (রা) দেওয়ার কথা বললেন। খলীফা কারো কথায় কান দিলেন না। তিনি বললেন, আমি এ চাদরের সবচেয়ে বেশী হকদার উম্মু আমারাকে মনে করি। এটি তাকেই দেব। কারণ, আমি উহুদের দিন তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর (সা) বলতে শুনেছি : “আমি যে দিকেই দৃষ্টিপাত করছিলাম, শুধু উম্মু উমারাকেই লড়তে দেখছিলাম।“ অতপর তিনি চাদরটি তার কাছে পাঠিয়ে দেন। [তাবাকাত-৮/৪১৫; সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা-২/২৮১]
তথ্যসূত্রঃ তাবাকাত, ইবন হিশাম, আনসাব আল আশরাফ, সাহাবিয়াত, সিয়ারু আ‘লাম আন-নুবালা।
মাশাল্লাহ
উত্তরমুছুন