বই রিভিউঃ নসীম হিজাযীর শেষ প্রান্তর


শেষ প্রান্তর, আমার পড়া সেরা ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোর একটি। নসিম হিজাযী গুণী সাহিত্যিক, এই বইটি দিয়েই তাকে চেনা, এরপর একে একে নসীম হিজাযীর অনুবাদ হওয়া সবগুলো উপন্যাস পড়ে ফেললাম।

আর কত বার করে যে “শেষ প্রান্তর” পড়লাম, ইয়ত্তা নাই। তবু যেন স্বাদ মিটে না। মনে হয় আমিও সেখানের একজন, মঙ্গোলদের আক্রমণ প্রতিরোধের এক অপরাজিত সৈনিক।
বলে রাখা ভালো ঐতিহাসিক উপন্যাস আর ইতিহাসকে এক করে ফেললে সমস্যা। ইতিহাস জানতে ইতিহাসের বই পড়তে হবে, ঐতিহাসিক উপন্যাস হোলো ঐতিহাসিক সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি সাজানো গল্প, সেখানে অনেক চরিত্রই কাল্পনিক হয়। তাই ঐতিহাসিক উপন্যাসকে ধ্রুব ইতিহাস বলে ভাবা যাবে না।



এবার বইয়ের গল্পে আসি। বর্বর মঙ্গোলদের খাওয়ারেজমীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে উপন্যাসটি রচিত। নসীম হিজাযী বড় দরদী ভাষায় তা ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের অতীতের সমৃদ্ধ ইতিহাস পড়তে পড়তে মনে সূক্ষ্ম বেদনার সঞ্চার হবে।
মঙ্গোলদের অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের মুখে অধিকাংশই বাঁচতে পারেন নি। সাধারণ মানুষ, শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ নির্বিশেষে হত্যা করা হয়েছে, তাদের কাঁটা মাথা সাজিয়ে উচু করা হতো, যে কমান্ডারেরটা বেশি উচু হতো সে বেশি সম্মানিত হতো।

খাওয়ারেজমের সমৃদ্ধ নগরী ধূলিসাৎ করে দেয়া হয়। বড় বড় দালান প্রাসাদ, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, বিশ্ববিদ্যালয় সব ভেঙ্গে ফেলে অশিক্ষিত যাযাবর তাতার গোষ্ঠী। এমনকি একজন প্রাণীকে জীবিত দেখতে চায় নি তারা। ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরীগুলোতে গিয়ে মঙ্গোলরা আযান দিত, সেখানে ধ্বংসস্তূপে লুকিয়ে থাকা ভীত সন্ত্রস্ত অসহায় লোকেরা মনে করতো তাদের মুসলিম ভাই তাদের বাঁচাতে এসেছে, তারা বেরিয়ে আসতো, আর তখন তাদের হত্যা করা হতো।

আর অযোগ্য সুলতান পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একজন বীর লড়ে গিয়েছিলেন । সত্যিই আমি সেই যুবরাজের জীবনী পড়ে হতভম্ব হয়ে যাই। সাড়া জীবন তিনি যুদ্ধের ময়দানে কাটিয়ে ছিলেন। চেঙ্গিস খানের জীবনের একটাই আফসোস ছিল, এই বীর যুবরাজকে ধরতে পারেন নি। মঙ্গোল বাহিনীকে ভালোই নাকানি চুবানি খাইয়েছিলেন একটি ছোট্ট সৈন্যদল নিয়ে।

তিনি হচ্ছেন শাহজাদা জালাল উদ্দিন মিংবুরনু। একটু সার্চ করে তাকে জেনে নিবেন। ইতিহাসের সেরা বীরদের বাছাই করতে বললে সেখানে আমি তাকেও রাখবো। শাহজাদা জালাল উদ্দিনকে খুঁজতে খুঁজতে মঙ্গোলরা ভারতবর্ষ পর্যন্ত এসেছিল। মিংবুরনু ছিলেন জাত যোদ্ধা। তিনি সারাজীবন মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন এমনকি ভারতে এসেও অনেক যুদ্ধ বিগ্রহে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।

এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আরো একজন আছে, তাহির বিন ইউসুফ। তাহির একটি কাল্পনিক চরিত্র। তাহিরও একজন যোদ্ধা, শাহজাদার মতই তার জীবনও সংগ্রামের মাঝে অতিবাহিত হয়।

সবাইকে পড়ার সাথে সাথে একটা ব্যাপার বলবো, একটু সার্চ করে করে পড়বেন, সংশ্লিষ্ট ইতিহাসগুলো ইতিহাসের পাতা থেকে জানার চেষ্টা করবেন। খাওয়ারেজমীয় সাম্রাজ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন, এগুলো আমাদের গর্বের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য। নিজেদের ইতিহাস নিজেরা না জানা মানে পুত্র হয়ে পিতার পরিচয় না জানার মতই ।

(হার্ড কপি পড়া উত্তম, তবু ডাউনলোড লিঙ্ক দিয়ে দিলামঃ http://priyoboi.blogspot.com/2001/02/blog-post.html)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে নারী সাহাবী যোদ্ধা ছিলেন

যুদ্ধ ও ক্ষমতার সমীকরণঃ কে বেশি শক্তিশালী