যুদ্ধ ও ক্ষমতার সমীকরণঃ কে বেশি শক্তিশালী
ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে পৃথিবীর তিনজন প্রতাপশালী রাজা/ বাদশাহ ছিলেন
উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান প্রথম সলিম, সাফাভী ইরানের শাহ ইসমাঈল আর
তৈমুরীয় বংশের তরুণ যোদ্ধা বাবর (তখনো মোঘল সাম্রাজ্যের জন্ম হয়নি।)
সুলতান সলিম আর শাহ ইসমাঈল দুটো বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, তাদের প্রতাপশালী বলা ঠিক আছে কিন্তু বাবর তখন কিছুই ছিলেন না, একজন উথান পতনের মধ্যে দিয়ে সারভাইভ করে বাঁচা এক তরুণ বাদশাহ ছিলেন, অবশ্য পরবর্তীকালে সে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন।
তাদের তিনজনের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করবো। আলোচনায় অবশ্য সুলতান সুলেইমান, শাহ তাহমাস্প আর সায়বানি খানের আলোচনাও এসে যাবে।
তিনজনের মৃত্যুর সময়কাল বলি, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে, সুলতান সলিম মারা যান ১৫২০ সালে, শাহ ইসমাঈল মারা যান ১৫২৪ সালে আর বাবর ১৫৩০ সালে। এর মানে ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকটায় তারা পৃথিবীতে বেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।
এবার দেখা যাক কে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। বাবর যখন একেবারে কিশোর, হঠাৎ পিতার মৃত্যুতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই ফরগানার রাজতখতে বসেন। সেই কিশোর বয়স থেকে আজীবন বাবর যুদ্ধ করে করে এমন এক সাম্রাজ্য গড়েছিলেন যার নাম পৃথিবীর ইতিহাসে ১০ টা সাম্রাজ্যের নাম করলে চলে আসবে।
তবে তিনি যখন তরুণ ছিলেন উযবেক খান সায়বানির সাথে বহু বার যুদ্ধ লেগেছিল। প্রতি বারই গো-হারা হেরেছিলেন। অবশ্য কখনো আবার জিতেও ছিলেন। সায়বানির সাথে থেমে থেমে বহু বছর ধরে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। যুবক বাবর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন নি যতদিন সায়বানি ছিলেন। সায়বানি বেশ ভালো যোদ্ধা বা সমরনায়ক ছিলেন।
কিন্তু বাবরের এই মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী শত্রুকে শেষ পর্যন্ত দমন করে শিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সাফাভী শাহ প্রথম ইসমাঈল। শাহ ইসমাঈলের সাথে সায়বানির মার্ভ প্রান্তরে এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। ১৫১০ সালে। সায়বানি নিহত হয়।
ব্যক্তিগত ভাবে শাহ ইসমাঈলকে আমি পছন্দ করি না, সে সুন্নিদের জোর করে শিয়া মতবাদ গ্রহণে বাধ্য করেছিলেন। আমি এমন কোনো সুন্নি রাজা-বাদশাহ পাইনি যে জোর করে শিয়াদের সুন্নি করেছেন। শিয়া মতবাদের মত এমন একটি ভ্রান্ত পথে যে জোর করেছিল সে কখনোই মুসলিমদের জন্য গ্রহণীয় হতে পারে না। আলোচনার খাতিরে তার নাম করলেও তাকে কখনোই ভালো শাসক বলা যায় না। ইরানের দিকে আজকে শিয়া জনসংখ্যার আধিক্যের পেছনে তাকে দায়ী করা যেতে পারে।
আজকের ইরানে ও তার আশে পাশে যে শিয়াদের দেখছি তারাও একদিন সুন্নি ছিল, এই ভাবনা আমাকে বড়ই বেদনা দেয়। তাদের কাছে প্রকৃত ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছানোর ব্যাপারে ভেবে দেখা প্রয়োজন। সাধারণ শিয়াদের "কাফির মুনাফিক" বলে দূরে ঠেলে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না, শাসকগোষ্ঠী সুন্নি-বিদ্বেষী এর মানে এই না সকলেই সুন্নি বিদ্বেষী। (কখন কি আচরণ হবে পরিস্থিতির ওপর ডিপেন্ড করে, যেমন সিরিয়ার যুদ্ধে ইরান ও শিয়া যোদ্ধারা মুসলিমদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখানের হিসেব ভিন্ন। এখানে শিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই বরং জিহাদ।)
শাহ ইসমাঈলের এই "শিয়া মতবাদে সুন্নিদের গণহারে দীক্ষিতকরণ" উসমানীয় সুলতান সলিম মেনে নিতে পারেন নি। এই নিয়ে দ্বন্দ এক সময় যুদ্ধে রুপ নেয়, তাদের মাঝে চালদিরানের এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৫১৪ সালে। ইসমাঈলের লজ্জাজনক পরাজয় হয়।
সলিম আর ইসমাঈলের দ্বন্দ তাদের ছেলেদের মধ্যেও অব্যাহত ছিল। সলিমের ছেলে সুলেইমানের সাথে ইসমাঈলের ছেলে তাহমাস্পের অনেকগুলো যুদ্ধ হয়। পিতার মতন সুলেইমানও যুদ্ধগুলোতে সম্মানজনকভাবে জয়লাভ করেন।
এবার সমীকরণ বিছাই, ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকের তিনজন প্রতাপশালী বাদশাহর মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী। বাবর হারলেন সায়বানির কাছে, সায়বানি হারলেন শাহ ইসমাঈলের কাছে, শাহ ইসমাঈল হারলেন সুলতান সলিমের কাছে।
দেখা যাচ্ছে তিনজনের মধ্যে সুলতান সলিম ছিলেন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এটা ঐতিহাসিক সত্য সলিমের সাথে আর কারো তুলনা করা যায় না সেই সময়কালে। তার পরে কেউ যদি থাকেন তিনি হচ্ছেন বাবর। হারা-জিতার উপর কে বেশি শক্তিশালী তা নির্ভর করে না। কেউ যদি এরুপ বলে আমি একমত হবো না।
বাবরকে সবচেয়ে কম শক্তিশালী মনে হলেও যোদ্ধা ও সমরনায়ক হিসেবে তিনি সলিমের চেয়ে অনেক উপরে। তবে সব দিক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব সলিমের দিকেই যায়।
সুলতান সলিম আর শাহ ইসমাঈল দুটো বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, তাদের প্রতাপশালী বলা ঠিক আছে কিন্তু বাবর তখন কিছুই ছিলেন না, একজন উথান পতনের মধ্যে দিয়ে সারভাইভ করে বাঁচা এক তরুণ বাদশাহ ছিলেন, অবশ্য পরবর্তীকালে সে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন।
তাদের তিনজনের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করবো। আলোচনায় অবশ্য সুলতান সুলেইমান, শাহ তাহমাস্প আর সায়বানি খানের আলোচনাও এসে যাবে।
তিনজনের মৃত্যুর সময়কাল বলি, তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে, সুলতান সলিম মারা যান ১৫২০ সালে, শাহ ইসমাঈল মারা যান ১৫২৪ সালে আর বাবর ১৫৩০ সালে। এর মানে ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকটায় তারা পৃথিবীতে বেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।
এবার দেখা যাক কে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। বাবর যখন একেবারে কিশোর, হঠাৎ পিতার মৃত্যুতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই ফরগানার রাজতখতে বসেন। সেই কিশোর বয়স থেকে আজীবন বাবর যুদ্ধ করে করে এমন এক সাম্রাজ্য গড়েছিলেন যার নাম পৃথিবীর ইতিহাসে ১০ টা সাম্রাজ্যের নাম করলে চলে আসবে।
তবে তিনি যখন তরুণ ছিলেন উযবেক খান সায়বানির সাথে বহু বার যুদ্ধ লেগেছিল। প্রতি বারই গো-হারা হেরেছিলেন। অবশ্য কখনো আবার জিতেও ছিলেন। সায়বানির সাথে থেমে থেমে বহু বছর ধরে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। যুবক বাবর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন নি যতদিন সায়বানি ছিলেন। সায়বানি বেশ ভালো যোদ্ধা বা সমরনায়ক ছিলেন।
কিন্তু বাবরের এই মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী শত্রুকে শেষ পর্যন্ত দমন করে শিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সাফাভী শাহ প্রথম ইসমাঈল। শাহ ইসমাঈলের সাথে সায়বানির মার্ভ প্রান্তরে এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। ১৫১০ সালে। সায়বানি নিহত হয়।
ব্যক্তিগত ভাবে শাহ ইসমাঈলকে আমি পছন্দ করি না, সে সুন্নিদের জোর করে শিয়া মতবাদ গ্রহণে বাধ্য করেছিলেন। আমি এমন কোনো সুন্নি রাজা-বাদশাহ পাইনি যে জোর করে শিয়াদের সুন্নি করেছেন। শিয়া মতবাদের মত এমন একটি ভ্রান্ত পথে যে জোর করেছিল সে কখনোই মুসলিমদের জন্য গ্রহণীয় হতে পারে না। আলোচনার খাতিরে তার নাম করলেও তাকে কখনোই ভালো শাসক বলা যায় না। ইরানের দিকে আজকে শিয়া জনসংখ্যার আধিক্যের পেছনে তাকে দায়ী করা যেতে পারে।
আজকের ইরানে ও তার আশে পাশে যে শিয়াদের দেখছি তারাও একদিন সুন্নি ছিল, এই ভাবনা আমাকে বড়ই বেদনা দেয়। তাদের কাছে প্রকৃত ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছানোর ব্যাপারে ভেবে দেখা প্রয়োজন। সাধারণ শিয়াদের "কাফির মুনাফিক" বলে দূরে ঠেলে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না, শাসকগোষ্ঠী সুন্নি-বিদ্বেষী এর মানে এই না সকলেই সুন্নি বিদ্বেষী। (কখন কি আচরণ হবে পরিস্থিতির ওপর ডিপেন্ড করে, যেমন সিরিয়ার যুদ্ধে ইরান ও শিয়া যোদ্ধারা মুসলিমদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখানের হিসেব ভিন্ন। এখানে শিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই বরং জিহাদ।)
শাহ ইসমাঈলের এই "শিয়া মতবাদে সুন্নিদের গণহারে দীক্ষিতকরণ" উসমানীয় সুলতান সলিম মেনে নিতে পারেন নি। এই নিয়ে দ্বন্দ এক সময় যুদ্ধে রুপ নেয়, তাদের মাঝে চালদিরানের এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৫১৪ সালে। ইসমাঈলের লজ্জাজনক পরাজয় হয়।
সলিম আর ইসমাঈলের দ্বন্দ তাদের ছেলেদের মধ্যেও অব্যাহত ছিল। সলিমের ছেলে সুলেইমানের সাথে ইসমাঈলের ছেলে তাহমাস্পের অনেকগুলো যুদ্ধ হয়। পিতার মতন সুলেইমানও যুদ্ধগুলোতে সম্মানজনকভাবে জয়লাভ করেন।
এবার সমীকরণ বিছাই, ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকের তিনজন প্রতাপশালী বাদশাহর মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী। বাবর হারলেন সায়বানির কাছে, সায়বানি হারলেন শাহ ইসমাঈলের কাছে, শাহ ইসমাঈল হারলেন সুলতান সলিমের কাছে।
দেখা যাচ্ছে তিনজনের মধ্যে সুলতান সলিম ছিলেন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এটা ঐতিহাসিক সত্য সলিমের সাথে আর কারো তুলনা করা যায় না সেই সময়কালে। তার পরে কেউ যদি থাকেন তিনি হচ্ছেন বাবর। হারা-জিতার উপর কে বেশি শক্তিশালী তা নির্ভর করে না। কেউ যদি এরুপ বলে আমি একমত হবো না।
বাবরকে সবচেয়ে কম শক্তিশালী মনে হলেও যোদ্ধা ও সমরনায়ক হিসেবে তিনি সলিমের চেয়ে অনেক উপরে। তবে সব দিক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব সলিমের দিকেই যায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন